Bangla Translation Foundation
Bangla Translation Foundation

Talk With Us

0123456789

রবীন্দ্রনাথের গানের অনুবাদ

আনন্দময়ী মজুমদার

বাঙালিকে তাঁর গান গাইতেই হবে—এই আত্মপ্রত্যয়ী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেই গান নানান দেশে, নানা বিন্যাসে, বহুমুখী প্রতিভায় বিচ্ছুরিত, বিচিত্র সৃজনে প্রকাশিত হয়ে বাংলার বাইরেও যে ছড়িয়ে গেছে, তার ইঙ্গিত আমরা পাই রবীন্দ্র-অনুবাদক উইলিয়াম রাদিচের এই উদ্ধৃতি থেকে:

‘রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শিল্পী : বিরাট, সীমাহীনভাবে বৈচিত্র্যময় ও জটিল সৃজনশীল শিল্পী। …সত্যিকারের সব বড় শিল্পীর মতো তাঁর সব কাজই একসঙ্গে অনেক কিছু বলে। …কাজগুলো বড় এ কারণে যে প্রতিটি প্রজন্মের মানুষ সেগুলোর মধ্যে নতুন নতুন জিনিসের দেখা পায়; বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পী ও অভিনেতারা সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন, সেগুলোর সম্ভাবনা অফুরাণ। বৈশ্বিক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো যখন ইউরোপীয় ও আমেরিকান ঐতিহ্যগুলোর কাছাকাছি চলে আসে, তখন আমরা দেখতে পাই, রবীন্দ্রনাথের কাজগুলো পৃথিবী জুড়েই আরও বেশি বেশি করে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
রবীন্দ্রনাথের কাজ বৈশ্বিক ব্যাপ্তি পেয়েছে রাদিচের মতো এমন সব নিবেদিতপ্রাণ মানুষের জন্যই।
ব্যবহারিকভাবে, প্রথমত যদি গানের কথা চিন্তা করি, তবে বিচিত্র সংস্কৃতি বা ভাষার আধারে নতুন করে সৃজনের বিষয়টা এসেই যায়। রবীন্দ্রনাথের গান শ্রবণ, অনুধাবন ও গাইবার যে অভিজ্ঞতা তিনি বাঙালিকে এমনভাবে দিয়ে গেছেন, তা বৈশ্বিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়তেই-বা বাধা কি? ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো, সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও।’
বাংলা ভাষা শিখে এই গানের মাধুর্য গ্রহণ করার কোনো বিকল্প হয়তো নেই, বলবেন অনেকে; আর তা করেছেনও তো—উইলিয়াম পিয়ারসন, আবু সয়ীদ আইয়ুব, ব্রাদার জেমস, এমন অনেক মানুষ। কিন্তু তার পরও কি একটি ভাষার ঐশ্বর্যকে ভিন্ন আধারে ঢেলে নেবার প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়—বিশেষ করে অভিবাসনের মাত্রা যখন কেবল বেড়েই চলেছে, আর অন্য সাংস্কৃতিক আবহের সঙ্গে সেতুবন্ধনের প্রয়োজন যখন চিরকাল থেকে যাবে? বিচিত্র সংস্কৃতি যখন দরজায় জানালায় এসে ধরা দিচ্ছে, সেখানে বাঙালি শুধু নেবে কেন, দেবেও তো বটে।
আমার কাছে, রবীন্দ্রনাথের গানের অনুবাদ দুরূহ কাজ, এতে নিরন্তর লেগে থেকেও লক্ষ্যস্থলে তীর ছুঁড়তে না পারার বেদনা থেকেই যায়। বহু বাঙালিই জানেন রবীন্দ্রনাথের সুর ও বাণীর মিশেলের মধ্যে যে অমর্ত্য, অজর অনুভূতি আছে, স্বাভাবিকতা আছে, তাকে নিছক বাণীর অনুবাদের মধ্যে ধরা যায় না; অনেক ক্ষেত্রেই ছন্দের, অন্ত্যমিলের, অনুপ্রাসের ব্যঞ্জনা, যা কাব্যকে চমক ও সৌন্দর্য দেয়, তা অনুবাদে অনুপস্থিত। সুতরাং বাঙালি রবীন্দ্র-ভক্তের কাছে, প্রায়শ, রবীন্দ্রসংগীত অনুবাদ এক ধরনের দুর্বল, ব্যর্থ, ছেলেমানুষী চেষ্টা বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক।
এতদিন পর্যন্ত রবীন্দ্রসংগীতের যে অনুবাদ হয়েছে, তা দুইটি ভিন্ন উদ্দেশ্য মেটাতে গিয়েই হয়েছে। প্রথমত, রবীন্দ্রনাথের নিজের হাত দিয়ে শুরু হওয়া, রবীন্দ্রসংগীতের অনুবাদ—ইংরেজি গদ্যকবিতার আদলে। রবীন্দ্র-অনূদিত গানের সংকলন ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’—তাঁর নোবেলবিজয়ী গ্রন্থ, যেটির ভূমিকা লিখেছিলেন ইয়েটস। সুর, দোলা, ভাব, সবটুকু মনে রেখেই এই অনুবাদ, এতে বাংলায় অনভ্যস্ত ইংরেজি পাঠক পান কবিতার প্রাণকে, অন্তত সেটাই লক্ষ্য। গানের গতি, গানের ছবিকে বিম্বিত করবে অনুবাদ—শান্ত হ্রদের মতো। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর মতো মননশীল লেখিকা এই ধরনের অনুবাদ পড়েই রবীন্দ্র-অনুরাগী হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এই ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন অনেক লেখক-অনুবাদক—যাঁদের মধ্যে রয়েছেন আঁদ্রে জিদ, সেনোবিয়া কামপ্রুবি, অমিয় চক্রবর্তী, ক্ষিতীশ রায়, উইলিয়াম রাদিচে, কেতকী কুশারী ডাইসন প্রমুখ।
এই ধরনের অনুবাদের উদাহরণ আমার নিজের করা অনুবাদ থেকেও হয়তো দেয়া যায়। আমি সাহিত্যের ছাত্রী নই, পড়াশুনো করেছি স্ট্যাটিসটিক্স বা রাশিবিজ্ঞান নিয়ে; তবু নানা কার্যকারণসূত্রে প্রায় পনেরো বছর ধরে রবীন্দ্রসংগীতের অনুবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি। একটু কুণ্ঠার সঙ্গে প্রসঙ্গত সেই পটভূমির কথাও বলব এখানে। প্রথমে ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী’ গানটির যে তর্জমা কয়েক বছর আগে করেছিলাম, তা তুলে দিই—
Girl of fifteen,
touching the fullness of moon
a hint of a smile alights your dreaminess.
sudden wild tweets solemnize your juvenescence
your slumber, fragrant with
the first fresh watery buds of monsoon
and your heartthrobs become the whispers of a forest.
An untenable melancholy shades your mind,
like a dark blue rainy horizon
as tears gather in your eyes.
এই ধরণের অনুবাদের বাইরেও রয়েছে আরেকটি ক্ষেত্র—গাইবার জন্য রবীন্দ্রসংগীত তর্জমা করা। সেটি আরেক উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য সফলভাবে হাসিল করা, আমার মতে আরো অনেক কঠিন। শুধু ভাব নয়, গানের ছন্দ, দোলাকে অক্ষুণ্ণ রেখে অনুবাদ করতে হবে, এবং খেয়াল রাখতে হবে, পড়তে যেন নিছক পদ্যের মতো না শোনায়। আর্নল্ড বাকে নামে এক সংগীত-গবেষক বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই কাজটি করেছেন, এবং এর রেকর্ডও রেখে গেছেন—যদিও অধুনা তাঁর কথা আমরা কম শুনেছি। দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে আমরা কিছু এই জাতীয় অনূদিত গান পেয়েছি সীমিত কলেবরে।
কিছুদিন আগে ‘আগুনের পরশমণি’ গানটি ইংরেজিতে গাইবার মতো করে তর্জমা করেছিলাম; ‘প্রজেক্ট ট্রান্সলেশিও’ নামের একটি সংগঠনের বড়ো সভায় সঞ্চালকের ভূমিকায় আমাকে সেখানে এই তর্জমাটি গেয়ে শোনাতে হয়েছিল।
Your flaming touch, let it blaze my heart
Purify this life of mine
Clarify this life of mine
Simplify this life of mine
Glorify this life of mine; atoning, as I burn.

Lift my soul, lift my heart, a blazing torch of light
Glowing in the sky with stars that shimmer in the night
Melody, let it sear, forever, as I burn

Impel my layers of dark, let your hands alight
Kindling stars awake, evoking them with light.

May darkness disappear from all my soul and sight
Deluding senses with sanctifying light
Agony, let it sear, forever, as I burn.
গানটি তর্জমা করার পর রেকর্ড করে রেখেছি এই লিংকে : https://youtu.be/qddtKF1aeAk—এটি একটি কেস স্টাডি বলা যেতে পারে।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা, সুর, ছন্দ, ভাষার অন্যান্য অলংকার ও সৌন্দর্য বজায় না রেখেও, সুরের স্মৃতিকে সম্বল করে আগাগোড়া গানের নির্যাসকে অন্য ভাষায় রূপান্তর খুবই দুরূহ কাজ। তার জন্য কিন্তু অনুবাদককে গানের সঙ্গে তেমন একটি সংবেদনশীল অন্তরঙ্গতার সম্পর্কে আসতে হবে, যেখানে তিনি গানের শ্রোতাই নন শুধু, শিল্পীও বটে।
এমন কোনো একসময়, হয়তো, যখন মূল এবং তর্জমার মধ্যে বোধের একাত্মতায় ও শ্রমের যোগাযোগে অনুবাদ তার নিজের পায়ে দাঁড়ায়, তর্জমার কাজ যখন সৃষ্টির খুব কাছাকাছি, তখন তাকে অনুবাদ না বলে অনুসৃজন, বা transcreation বলা যায়। তর্জমা তখন শিল্পকর্মের মতোই স্বকীয়তা অর্জন করে।
তাই একই গানের একাধিক অনুবাদ সমান্তরাল ভাবেই সার্থক হতে পারে, এবং সেক্ষেত্রে এদের প্রতিতুলনা করবার কোনো মানে হয় না।
প্রথম যখন যুক্তরাষ্ট্রে গেলাম পিএইচডি-র জন্য, তখন এক নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের গান আমার মার্কিন বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে গাইতে ও অনুষ্ঠানে একসঙ্গে পরিবেশন করতে পারার উদ্দেশ্যে প্রথমে অনুবাদ করে তা ওদের বোঝানোর দরকার ছিল। শিল্পী ইমতিয়াজ আহমেদের উপস্থিতিতে নিউ ইয়র্কের ব্রেখট ফোরামে আমরা যে গান ও গ্রন্থনা উপস্থাপন করেছিলাম, সেখানে উপস্থিত বহু বাংলা-না-জানা শ্রোতাদর্শক এই গানগুলির অনুবাদ হাতে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন। গান ও আলোচনা শেষে সেখানে রবীন্দ্রনাথের ওপর সত্যজিৎ রায়ের প্রামাণ্যচিত্রটি দেখানো হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন ও আয়োজন করেন রবীন্দ্র-অনুরাগী একজন গণিতবিদ—অধ্যাপক সুদেব মিত্র। উপস্থিত ছিলেন প্রগতিশীল ঘরানার অনেক বুদ্ধিজীবীও। কিন্তু তাঁরাও ওই অনুষ্ঠানে সেইদিন প্রথম রবীন্দ্রনাথকে চিনলেন, তাঁর গান শুনলেন।
এই গানগুলি অনুবাদের পর, অনেক মার্কিন ছেলেমেয়ের মনে স্থান পায়, সেটি লক্ষ করে প্রাণিত বোধ করি। পরে, যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ওঠা এক ভারতীয় নৃত্য একাডেমি আমাকে তাঁদের অনুষ্ঠানের জন্য রবীন্দ্রনাথের ‘শাপমোচন’ ও ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যের অনুবাদ করতে অনুরোধ করেন। এতে অংশগ্রহণকারী নৃত্যশিল্পী ও দর্শকদের একটা বড়ো অংশ বাংলা জানেন না, তাই অনুবাদের চাহিদাটা বেশি ছিল। কিন্তু এমন রবীন্দ্র-অনুষ্ঠান আমেরিকা, ক্যানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া অথবা পৃথিবীর আর দশটি দেশেও, এমনকি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে, হয়ে থাকে ভুরি ভুরি। এবং সর্বত্র নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া বাংলা সংস্কৃতির বাহন হয়ে আসে রবীন্দ্রনাথের গান ও গীতিনৃত্যনাট্য। অনুবাদের চাহিদা থাকে সবসময়।
আমেরিকায় শিক্ষকতা ও গবেষণা করতে করতে সাপ্তাহিক দুই হাজার মাইল লম্বা দূরত্ব পাড়ি দেবার সময়, পথের অবসাদ ভুলে থাকার জন্য, আমি রবীন্দ্রনাথের অনুবাদে ভিন্ন চাহিদা নিয়ে ফিরে আসি। এবার চাহিদা বাইরের নয়, অন্তরের; ‘হৃদয় আমার চায় যে দিতে’ এমন কথা তো গানেই আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বাঙালি পরিবারের সন্তানদের রবীন্দ্রগান শেখাতে শুরু করি ২০০৫ সাল থেকে। এরা যুক্তরাষ্ট্রে বড়ো হচ্ছে, জন্মেছেই সেখানে, বাংলা বলতে পারলেও পড়তে পারে না। সেই শিক্ষায়তনেও এই অনুবাদগুলি কাজে আসে, কারণ গানের ভিতরে না গিয়ে গানের সুর ও বাণীকে কণ্ঠে তেমনভাবে প্রকাশ করা অসম্ভব বলে আমার মনে হয়েছিল।
অনুবাদগুলি একত্র করে, সংরক্ষণ করার প্রয়াস আমার কলেজবন্ধু রুমেলা সেনগুপ্তর। দুজনেরই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিদ্যায়তন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে আমাদের প্রথম আলাপ। সেখান থেকে শুরু আমাদের একসঙ্গে গান, এবং গীতবিতানের প্রতি ওর নিবিড় ভালোবাসা। আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনা শুরু করেছি, এবং ও নেদারল্যান্ডসে পেশাজীবী। একসময় রুমেলাই আমার ও তার নিজের অনুবাদের একটি নিজস্ব পরিপাটি জায়গা তৈরি করে দেয়—আমরা ‘Gitabitan in English’ (http://gitabitan-en.blogspot.com) নামের একটি ব্লগে আমাদের অনুবাদকে ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারি।
রুমেলার অসংখ্য প্রতিভার মধ্যে একটি ওর আঁকিয়ে সত্তা, যেটি এই ব্লগ নির্মাণের সময় তার সাক্ষর রাখে এর সৌন্দর্যে। এই ব্লগ আমাদের ডানা মেলার আকাশ ও কাজের নিভৃত আশ্রয় হয়ে ওঠে।
২০০৯ নির্মিত এই ব্লগে এখনো পর্যন্ত প্রায় এক হাজার গানের অনুবাদ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নিজে ২২০০-এর বেশি গান রচনা করেছিলেন, কাজেই পুরো গানের ভাঁড়ার ছোঁয়ার এখনো বাকি।
এই অনুবাদের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সৃজনশীল শেকড়ে, অন্তরের আশ্রয়ে ফিরে আসি, রবীন্দ্র-অনুরাগীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি হয়, এবং বাংলা-না-জানা বিশ্বে, ওঁর গান যাঁদের ছুঁতে পারে, তাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, কিছুটা হলেও।
এই ব্লগের তর্জমাগুলি সাধারণত আমাদের নিজেদের প্রাত্যহিক অনুভব, অভিজ্ঞতা, পথ-চলা দিয়ে অনুরণিত হয় । আমাদের রোজকার অনুবাদের বাছাই সেভাবে কাজ করে। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে সমাজের ও সময়ের সঙ্গেও অনুরণিত হয়। আমি নিজে গানের আধারে বিশ্বাসী। বর্ষার মরশুমে তাই বর্ষার গানই আমরা অনুবাদ করি বেশি, শীতের নয়। তেমনি মনের দরজা-জানালা খোলা ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অথবা বিশেষ এক তারে ঝংকার শুনতে পেলে আমরা সেই টানে সাড়া দিই। গাইবার সময়ও তো সাধারণত এভাবেই আমরা গান বাছাই করে থাকি।
কেউ কেউ কখনো কোনো বিশেষ অনুবাদের প্রয়োজনে ফরমায়েশ জানালে আমরা খুশি হয়ে সেই প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করি। প্রবাসী শিল্পীরা হয়তো আমাদের এই ভাঁড়ার থেকে অনুবাদগুলি তাঁদের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতে পেরেছেন। বিভিন্ন দেশে যখন সেই অনুবাদ রবীন্দ্রনাথের গান হিসেবে ছড়িয়ে যায়, ভারতের ইংরেজি মাধ্যম ইস্কুলের পাঠ্যবইয়ের পাতায়ও হাজির হয় (আমাদের অজানিতে), একটু বিস্ময় ও হয়তো খুশিও লাগে।
আমরা লক্ষ করি, এই ব্লগের মতামত পেশ করার ছোট পরিসরে অনেক মানুষ তাঁদের মতামত ব্যক্ত করতে চেয়েছেন; কাজেই বৃহত্তর আড্ডা-ঘর হিসেবে ফেইসবুকে একটি ‘পেইজ’ খোলে রুমেলা, নাম দেয় ‘Thoughts of Tagore’।
এইখানে আমরা প্রথম থেকেই, নতুন কোনো অনুবাদ হলে তা পোস্ট করে দিই। অনেকে এগিয়ে এসেছেন সহমর্মিতা ও সময় নিয়ে, এক ধরনের রবীন্দ্রগানের অনুসৃজন চর্চায়, গঠনমূলক সমালোচনায়। উদ্দেশ্য, গানের অন্তর্নিহিত শক্তি, প্রাণ, ভাব, ছবি যেন ঠিকমতো বেরিয়ে আসে—পাঠক হিসেবে তাঁরা তাঁদের যে মূল্যবান মতামত দিয়েছেন, তার জন্যই আজকে গানের অনুবাদ কিছুটা হলেও মোক্ষম হতে পেরেছে। এঁরা হলেন আমাদের সহস্রষ্টা : সুমন দাসগুপ্ত, সৌম্য শংকর বসু, অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় এবং আরো অনেকে।
আমাদের রবীন্দ্রগানের ব্লগের সঙ্গেই সৃষ্টি হয় আরেকটি ব্লগ, যেখানে গান ছাড়া রবীন্দ্রনাথের বাকি কবিতার অনুবাদ সংরক্ষিত হয়; এতে সুব্রত মজুমদার, রুমেলা ইত্যাদি অনুবাদক-রা আছেন, তবে মূলত এর পেছনে আছেন, আমাদের আরেকজন শিল্পী বন্ধু, দেবযানী চক্রবর্তী। দেবযানীর প্রতিভার নাগাল পাওয়ার যে অবকাশ এই কবিতা অনুবাদের মাধ্যমে আমি পাই, এতে খুব খুশি হই। তাঁর কবিতার অনুবাদে অন্য এক সুবাতাসের পরিচয় পেয়েছি, যা আমার ভাষাগত বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে অনেকটা সাহায্য করেছে।
রবীন্দ্রনাথের গানের বাণীতে হয়তো সময়ের ভাঁজ পড়েনি—এই অজরতা, সর্বজনীনতার একটা সুবিধে আছে ঠিকই, অর্থাৎ এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ভাবতে হয় না, কিন্তু তর্জমার মূল প্রতিবন্ধকতা এর ভাষা। চ্যালেঞ্জ হলো, শৈলীকে সমসাময়িক, বিশ্বগ্রাহী করে গড়ে তোলা—যেন তা মহাদেশ ও সাংস্কৃতিক সীমানা পেরিয়ে যেতে পারে। এই শেষের কাজ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হয় অনেকটাই। রবীন্দ্রযুগের ইংরেজি কবিতার সঙ্গে এই যুগের ইংরেজি কবিতার অনেক দূরত্ব। আমাদের দায় হলো ভাব বজায় রেখে ভাষার এই সময়গত ব্যবধান পাড়ি দিতে পারা।
কয়েক বছর আগে, বাংলাদেশে একজন প্রবীণ মার্কিন ভদ্রলোকের দেখা পাই, যিনি বহুদিন এখানে বসবাস করেছেন, এবং স্বচ্ছন্দে বাংলা বলতে পারেন। শুধু তাই নয়, বিশ বছর ধরে তিনি রবীন্দ্রনাথের গানের অনুবাদ করে চলেছেন, এবং বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই গানগুলি গেয়ে চলেছেন। তাঁর নাম জন থর্প (রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের অনুষ্ঠানে তিনি গান পরিবেশন করার আমন্ত্রণ পেয়েছেন, পরিবেশন করেছেন রবীন্দ্রসংগীত—বাংলায় এবং ইংরেজিতে)। অনুবাদগুলি তাঁর নিজের। তাঁর বলিষ্ঠ, সুললিত গায়কী এবং সুন্দর তর্জমার জন্যই হয়তো, গানগুলি শুনতে একটুও বেকায়দা শোনাচ্ছে না।
ইতিপূর্বে আমার বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন অনেক মানুষ, তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক সনৎ সাহা, আমার পিতৃসম মানুষ আছেন, আশৈশব রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, রবীন্দ্রসংগীত-গুরু ও প্রশিক্ষক সংগঠক অধ্যাপক মুক্তি মজুমদার আছেন, তাঁরাও এই গান গাইবার উদ্দেশে অনুবাদের বিষয়ে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। হয়তো সেই কারণে এই কাজের যে খাটুনি আর সন্তোষের অভাববোধ, সেসব ডিঙিয়ে এগোতে পেরেছি।
কাজেই জন থর্পের অনুবাদ ও গান শুনে আমি নতুন উদ্যমে গানের ছন্দ ও অন্ত্যমিল বজায় রেখে, গান করার জন্য, ইংরেজি অনুবাদ শুরু করি। এটি যেমন প্রেরণাদায়ক তেমনি সময়সাধ্য বিষয়। এতে অনেকখানি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার আছে, এর বাধা ও আলো পথ খুঁজে নেবার প্রেরণা জোগায়। কিছুদিন আগে গানের ছন্দ বজায় রেখে ‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে’ গানটির অনুবাদ করেছি, সেটি নিচে দেওয়া হলো—
Raining melodies
Let it rain, let it rain
All the tunes you make
On my heart, on my face

From the east, like the sun
Tender on my waking eyes
In the dark in the night
Raining down on my heart
Raining melodies
in my tears on my smiles

Raining on my branches
where my flowers do not ever sprout
Waking, refreshing me
With your sodden breezy bout

Raining melodies
on my broken buried beds
Raining melodies
on my sorrow, breathless seeds
Raining melodies
Sooth my craving sooth my yen
গানটি পরীক্ষামুলকভাবে গেয়ে এই লিংকে রেকর্ড করা রয়েছে—https://youtu.be/k1V9Fb1BMMw
অনেকসময় সত্যিকারের পরিশ্রমী, আন্তরিক পাঠকের কাছে যখন খুঁটিনাটি দিকনির্দেশ বা সৃজনশীল সমালোচনা পেয়েছি, তখন তা সমাদরের সঙ্গে গ্রহণ করেছি। ছোটোবেলায় সামান্য কবিতা লিখতাম ও অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের কাছে সেইসব লেখা কাঁচা বয়েসের উদ্যমে নিয়ে যেতাম, তিনি কন্যার আদর দিয়েছেন, প্রশ্রয় পেয়েছি। তাঁর কথায় সতেরো বছর বয়েসে তর্জমা করেছিলাম চিলির নোবেলবিজয়ী কবি পাবলো নেরুদার ‘স্মৃতিকথা’—তাঁর সম্পাদিত ত্রৈমাসিক ‘প্রাকৃত’ পত্রিকায় অনুবাদটির অংশবিশেষ ছাপা হয়। পরে ইংরেজি থেকে বাংলায় আরো কয়েকটি বই অনুবাদ করা হয়—সব কটি এক গভীর তাড়না থেকে। এই রবীন্দ্রগানের অনুবাদও তাই। হয়তো ছোটোবেলা থেকে দুই কলম আঁচড় কাটার একটা অভ্যেস ছিল ব’লে।
সেভাবেই হয়তো, ভালবাসা থেকে সমসাময়িক ইংরেজি সাহিত্যের লেখক, দার্শনিক, কবিদের লেখা পড়ার চেষ্টা করেছি। সাম্প্রতিক কিছু লেখকের কাজ আমাকে গভীরভাবে প্রাণিত করে চলেছে।
আমার মতে, অনুসৃজনের সময়, সৃষ্টির আবেগ, দীপ্তি, জীবন, জগৎ সম্পর্কে একটি দুর্দান্ত প্রেরণার ঢেউয়ে ভেসে না গেলে ঠিকমতো তর্জমা করা যায় না। এই প্রেরণাই নিজেদের প্রাত্যহিকতার ধুলো ও মলিনতা দূর করে, গভীর ক্ষত নিরাময় করে। এই প্রেরণা না থাকলে সৃষ্টি বৈভবহীন, শুকনো । এই শুষ্কতার অভিজ্ঞতা আমার অনেকবার হয়েছে। তবু মাঝেমধ্যে একভাবে বসে তর্জমা করতে হয়—প্রথম খসড়া অনেক সময় মনের মতো হয় না। তবু তা পরবর্তী খসড়ার জন্য সিঁড়ি বা কঙ্কাল হিসেবে কাজে আসে। ক্রমশ হাতুড়ি পেটানোর মতো অনেক ঢালাই-পেটাই করতে হয়—অপ্রয়োজনীয়, অপরিশ্রুত অংশ ছেঁটে ফেলতে হয়, যতক্ষণ না ঠিক যতটুকু দরকার বলে মনে হয়, ততটুকুই বাকি থেকে যায়।
ভাষা নিজে এমন তরল এবং সর্বগ্রাসী। সঠিক জিনিসটিকে টেনে নেবার চুম্বকীয় আকর্ষণ, গলিয়ে নেবার সক্ষমতা আছে ভাষার।
ভাষার আকর্ষণ অনুসৃজনের একটি দিক।
রবীন্দ্রসংগীত শুধুমাত্র আত্মিক নয়, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতির জিনিসও বটে। এই অসাধারণ প্রকাশভঙ্গি ও অন্তর্লীন গভীরতাকে ধারণ করার ক্ষমতা তৈরি করার একটা দুর্দান্ত আবেগ অনুসৃজকের দায়িত্ব, এবং এই দায়িত্ব আসলে তার স্বাধীনতাই।
তার কাজ গানটির সুর ও শব্দকে, এর ভাষা ও প্রকাশভঙ্গিকে সম্পূর্ণ আত্মস্থ ও নিজস্ব করে তোলা। তর্জমা যেন অন্য ভাষায় গানটিকে মজুদ করার দীন চেষ্টায় পর্যবসিত না হয়, যেন অনুসৃজকের হৃদযন্ত্রের সঙ্গে একাত্ম হতে পারে এর জন্মপ্রক্রিয়া।
ইংরেজি ভাষার প্রবচন, বাগধারা, ভাষার সূক্ষ্মতা, ধ্বনি, অনুপ্রাস, দ্যোতনা—এগুলি সবই সময়-অসময় মনে টুকে রেখে পরে ব্যবহার করার চেষ্টা করি। এতে প্রয়োজনের সময় ঝোলায় কিছু দরকারি সামগ্রী মজুদ পাওয়া যায়। মনে আছে শব্দের মোক্ষম ব্যবহার নিয়ে অনেক আগে হাসান আজিজুল হক বলেছিলেন, শব্দকে তীরের মতো মোক্ষম ভাবে ধরতে হয়, অর্থভেদী বাণ দিয়ে—অনুবাদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য নিশ্চয়ই।
লেখার প্রথম খসড়ার পরে অসংখ্যবার কলম চালাতে হতে পারে, এবং আমার ক্ষেত্রে সাধারণত হয়, যতক্ষণ মনে হয় এর বেশি আমার কিছু করার ছিল না, তবু এক মাস পরে ফিরে এলে কোনো কোনো সময় অন্য ভাবে কলম ধরতেও ইচ্ছে করে।
এছাড়া রবীন্দ্রনাথের প্রতি আগ্রহ আশৈশব, পারিবারিক ভাবে সেটি পাওয়া। আমার ঠাকুরদা সুবোধচন্দ্র মজুমদার, খুলনায় রাবীন্দ্রিক ও সাংস্কৃতিক আবহাওয়া তৈরীর অগ্রগণ্য এবং খুলনায় রবীন্দ্রসংগীত প্রচারে পুরোধা ছিলেন। মাত্র ত্রিশ বছর বয়েসে তিনি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের মূল স্বরলিপিকার দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে স্বরলিপি প্রসঙ্গে মৌলিক আলোচনা করতেন, কলকাতার সঙ্গীত সম্মিলনীতে ওস্তাদ এনায়েত খানের কাছে সেতারে তালিম নিতেন, নিজের বাড়িতে এস্রাজ, খোল, পাখোয়াজ, তবলা, হারমোনিয়াম, বাঁশি, সেতার, বেহালা নিজের সাত সন্তানকে ও স্থানীয় শিল্পীদের শেখাতেন। এছাড়া গানে সুর দেওয়া, যেসময় রবীন্দ্রনাথের রেকর্ড ও লং প্লে বের হয়নি, সে সময় রবীন্দ্রনাথের গান নিজে স্বাধীনভাবে রপ্ত করে, তা ছড়িয়ে দেওয়া, রবীন্দ্রনাটক ও নৃত্যনাট্য পরিচালনা করা, নানা রকম রাগ-রাগিণীর তালিম দেওয়া তো ছিলই। প্রখ্যাত শিল্পীরা অল্প বয়েসে সেই সময় তাঁর কাছে সঙ্গীতচর্চার জন্য এসেছেন।
আমার পিসি উমা মজুমদারের গানের কণ্ঠ ও দক্ষতা প্রবাদপ্রতিম, প্রথমত পিতা সুবোধচন্দ্র মজুমদার তাঁর সঙ্গীত শিক্ষক এবং তারপর, কলকাতার রবীন্দ্রসংগীতের বিশেষ শিক্ষায়তন গীতবিতান-এ পড়াশুনো করেন তিনি। এখানে তাঁর সংগীতগুরু ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতের ওস্তাদ অনাদি দস্তিদার, কনক দাস (বিশ্বাস), নীহারবিন্দু সেন, রমেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবিনয় রায় প্রমুখ। পিসি মুক্তি মজুমদারও অসাধারণ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, খুলনায় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের প্রধান দায়িত্ব নিয়েছেন, শহরে ও গ্রামে খুলনার সাংস্কৃতিক জগতে পুরোধা ছিলেন, রবীন্দ্রসংগীত চর্চার জগতে তাঁর অবদান সংশ্লিষ্ট সকলে জানেন। মা দীপিকা মজুমদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রতে অনেক বছর ধরে নিয়োজিত ছিলেন। বাবা সুব্রত মজুমদার অনেকের সঙ্গে সঙ্গে আমারও রবীন্দ্রসংগীত-গুরু, সংগীতের ব্যাপারে তাঁর পাণ্ডিত্য অগাধ, রাজশাহীতে রবীন্দ্রসংগীতচর্চায় অগ্রগণ্য। তাঁর প্রতিভা নানামুখী। বয়স যখন বিশের কোঠায় সেসময় তিনি রবীন্দ্রসংগীতের যে অনুবাদ করতেন, সেগুলি তাঁদের পারিবারিক সাময়িকীতে বের হবার সুবাদে আমার হাতে আসে। বোধের গভীরতা আর ভাষার ওপর দখল দেখে কতটা প্রাণিত হয়েছিলাম এখনো মনে আছে। কাজেই রবীন্দ্রসংগীতের মতো, রবীন্দ্রনাথের অনুবাদের বিষয়টিও আমার পরিবার থেকে প্রাথমিকভাবে পাওয়া।
রবীন্দ্রসংগীতের বেশ কিছু অনুবাদ করে ফেলতে ফেলতে এখন সেই সংখ্যা এক হাজারের কাছে পৌঁছেছে বটে। এর অনেক আগেই আমাদের শুভার্থীরা আমাদের এই লেখাগুলিকে সংকলিত করতে বলেছেন। প্রশ্ন এই যে, এই বইটির পাঠক কোন দেশের হবেন, এবং প্রকাশককেই বা কোন দেশের হতে হবে। হয়তো বাংলাদেশ নয়। এখনো পর্যন্ত আমাদের পাঠককূলের একটি বড়ো অংশই উপমহাদেশের অবাঙালি এবং প্রবাসী বাঙালিরা। তবে আরো প্রশ্ন আছে— গানের অনুবাদ কি গাইবার উপযোগী হবে? যদি হয়, তবে কি কিছু গানের সিডি-র অনুষঙ্গে অনুবাদ প্রকাশ করলে ভালো হবে? যদিও এই নিয়ে আমরা ভেবেছি, তবু অনুবাদকের কাজ তো অনুবাদ করা, তাই সেই পথেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি।
আমার জন্য রবীন্দ্রনাথের গানের অনুবাদের অভিজ্ঞতা এই—এ পথে যে চড়াই-উৎরাই, হতাশা, উদ্যম, প্রেরণা বা শিক্ষা পেয়েছি, তা-ই লিখলাম। সকলের পরিচিত একটি গান, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ দিয়ে লেখা শেষ করছি।
If all they do is disregard, won’t you walk all alone
Traveler, solitaire, walk away, fly on your own.

If the people do not speak, make you feel apologetic
if they turn away, are truly meek
release your heart
make your voice big and energetic, voice all alone

when they turn a blind eye, leaving you solitary
‘neath the dour sky
embrace the path
with its suffering and wounded sigh, walk all alone

if they do not hold a light, shark away in dire fright
they shut the door in the stormy night
Burn your heart
Let your blazing breath make the light, a light of your own


আনন্দময়ী মজুমদারের ছোটোবেলা কেটেছে বাংলাদেশে ও আফ্রিকায়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউটে, পিএইচডি যুক্তরাষ্ট্রে। অধ্যাপনা করেছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সতেরো বছর বয়েসে তাঁর প্রথম অনুবাদ পাবলো নেরুদার ‘স্মৃতিকথা’ হাসান আজিজুল হক সম্পাদিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রাকৃত’-তে প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রগান শিখেছেন পারিবারিক বাতাবরণে, গান করে চলেছেন জ্ঞান হবার পর থেকে এখনো পর্যন্ত। রবীন্দ্রসংগীতের একটি সিডি প্রকাশিত হয়েছে ২০১২ সালে। গান, অনুবাদ, সাহিত্য এবং রাশিবিজ্ঞানে শিক্ষকতা ও গবেষণা তাঁর কাজের ক্ষেত্র। অনুবাদ করেছেন জুলিয়াস ফুচিকের ‘সূর্যোদয়ের গান’, ডেভিড গেস্টের ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’, পাবলো নেরুদার ‘স্মৃতিকথা’ এবং ‘ভালোবাসার শত সনেট’, অঁতোয়ান দ্য স্যাঁৎ একজ্যুপেরির ‘ছোট্ট রাজপুত্র’, ক্যারল ম্যাকক্লাউডের ‘তুমি কি আজ বালতি ভরেছ?’। ‘Gitabitan in English’ নামের একটি ব্লগে রুমেলা সেনগুপ্ত ও আনন্দময়ী মজুমদার রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’-এর প্রায় এক হাজার গানের অনুবাদ করেছেন।

1 Comment

  • Banglatranslate July 16, 2023 at 6:33 AM
    Reply

    বাঙালিকে তাঁর গান গাইতেই হবে—এই আত্মপ্রত্যয়ী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেই গান নানান দেশে, নানা বিন্যাসে, বহুমুখী প্রতিভায় বিচ্ছুরিত, বিচিত্র সৃজনে প্রকাশিত হয়ে বাংলার বাইরেও যে ছড়িয়ে গেছে, তার ইঙ্গিত আমরা পাই

Leave a Comment